মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর :ঃ
মেহেরপুরে বাঁশ কাটার পর এবার জোরপূর্বক ঘর ভেঙ্গে জমির সীমানা নির্ধারণ করে তারের বেড়া দিলেন কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কালিগাংনী গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে বাবলু।
রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর), সকালের দিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের কালী গাংনী স্কুল পাড়াতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, কালিগাংনী মোজার ৬৯৮ খতিয়ান ভুক্ত আর এস ২৮১৩ নং দাগে ৫১ শতক জমি বিমল বাবু ভারতে চলে গেলে উক্ত জমি খাস জমির আওতায় চলে যাওয়ার পর ১৪ শতকে মকছেদ আলী প্রায় ৫০/৬০ বছর ধরে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। ১১ বছর পূর্বে মকছেদ আলী মারা গেলে তার অসহায় স্ত্রী শামসুন্নাহারকে নিয়ে মেয়ে রাহেনা খাতুন ও মাসুমা খাতুন বসবাস করছেন। উক্ত জমিতে মকছেদ আলীর কবরও রয়েছে। মকছেদ আলী জীবিত থাকাকালীন সময়ে দখলীয় জমিতে বাঁশের বাগানও করেন। কিন্তু মকছেদ আলী মারা যাবার পর গ্রামের বাবলু খাস জমি নিয়ে ঝামেলা করতে থাকে। এবিষয়ে বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত, মেহেরপুরে একটি মামলা দায়েরও করা হয়। যা এখনও চলমান থাকার পরও বাবলু গত ৭/৯/২২ তারিখে সংঘবদ্ধ হয়ে দখলীয় জমিতে এসে জোর পূর্বক বাঁশ কর্তন করে নিয়ে যায়। বাঁধা প্রদান করলে মারধর ও জানে মেরে ফেলার হুমকী দেওয়া হয়। এব্যাপারে মৃত মকছেদ আলীর মেয়ে রাহেনা খাতুন মেহেরপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে সদর থানার এসআই এসে তদন্ত করে যান গত শনিবার।
ইতিপূর্বেও জমি দখলের জন্য বিভিন্ন ভাবে হুমকী ধামকী সহ মারধর করে আহত ও শ্লীলতাহানি করে। ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলে।
অবশেষে রবিবার সকালে আওয়ামী লীগ নেতা বাবলু’র নির্দেশে দখলীয় জমিতে নির্মাণ করা রান্না ঘর, পায়খানাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভেঙে গুড়িয়ে দেয় মৃত আব্দুর রউফের ছেলে হাদিসুর, গাজাল, মৃত করিম বক্সের ছেলে মোফাজ্জেল, মৃত আবুল এর ছেলে মোস্তফা ও আব্দুল খালেক। এ সময় বাবলু ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীর অনেকে।
একইসাথে কদম, ইমলাক, জোহাসেন, সাইদুল, হেকমত, আইনুউদ্দীন, সোহান, টিপুসহ অনেকে দা, হাতুড়ি, খোন্তা নিয়ে তারের বেড়া দিতে থাকে। এতে বাঁধা প্রদানে হত্যার হুমকী দেওয়া হয়। ঘরসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙলেও প্রাণ ভয়ে ভীতু হয়ে নিরবে তা দেখতে থাকেন অসহায় পরিবারটি। কেউ কিছু বললে তাকেও জানে মারার হুমকী দেওয়া হয়। এতে সকলেই দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
রাহেনা’র বৃদ্ধা মাতা শামসুন্নাহার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, স্বামী মারা যাবার পর থেকেই বাবলুসহ আরও কয়েকজন আমার দখলীয় জমি দখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আমি গরীব ও অসহায় হওয়ায় এবং অর্থ না থাকায় থানা, কোর্ট, ডিসিসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও কোন সুরাহা পাচ্ছিনা। আজ আমার রান্না ঘর ও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পায়খানাটিও ভেঙে দিয়েছে বাবলুসহ ওর লোকজন। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা।
তিনার দখলীয় জমি ফেরত পেতে ও ঘর ভাংচুরের সঠিক বিচার চেয়ে তিনি মেহেরপুর জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সদর থানা ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা বাবলু এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি থানায় রয়েছি।
সম্প্রতি বাঁশ কাটা হলে রাহেনা থানায় অভিযোগ করেন। তিনি জানান, উক্ত জমি আমাদের। রেকর্ডে ভুল হয়ে জমি খাস হয়ে গেলে ওরা তা দখল করে নেয়। বিকেলে ফিরে এসে কথা বলার কথাও জানান। তবে তিনি উপস্থিত থেকে ঘর ভেঙে তারের বেড়া কেন দিচ্ছেন জানতে চাওয়া হলে উপস্থিত ছিলেন না বরং লেবারে বেড়া দিয়েছে বলে জানান।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে ফোন কলে ঘটনা সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হলে, বিবাদী বাবলুসহ উনার লোকজন থানায় রয়েছে বাদী পক্ষকে থানায় সমাধানের জন্য যাওয়ার পরামর্শ দেন।